শূন্য হাতে ঢাকায় এসে বর্তমানে ২৫ কোটি টাকার মালিক
মাত্র ১২ বছর বয়সে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন মো. আমান উল্লাহ। সময়টা ২০০৩ সালের শুরুতে। কাজের সুযোগ পান পুরান ঢাকার ছোট কাটরা এলাকার নাসরিন টয় কারখানায়।
সেখানে বাচ্চাদের খেলনা তৈরি হয়। তবে ওই সময়ে দেশি খেলনার চেয়ে বিদেশি খেলনার বাজারই বড় ছিল। ওই কারখানায় বিদেশি খেলনা আনা হতো, তা অনুসরণ করে দেশে খেলনা তৈরির চেষ্টা করা হতো।
আর সেই পণ্য নেড়েচেড়ে আমান উল্লাহ ভালো’ভাবেই রপ্ত করেছিলেন খেলনা তৈরির কলাকৌশল। বিদেশি এসব খেলনার পেছনে এতটাই সময় দিয়েছিলেন যে পাঁচ বছরে মাত্র চার ঈদে গ্রামে গিয়েছিলেন।
১৭ বছর ৮ মাস বয়সে নিজের জমানো সামান্য টাকায় মা ও বোনের গয়না বিক্রি এবং প্রবাসে থাকা বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে ছোট আকারে খেলনা তৈরির কারখানা চালু করেন। শুরুতে সব মিলিয়ে পুঁজি ছিল মাত্র ৯০ হাজার টাকা। আমান উল্লাহর আমান প্লাস্টিকের যাত্রাটা ছিল এমনই।
গত সোমবার পুরান ঢাকার চকবাজারের অফিসে বসে আমান উল্লাহ বলেন, ‘এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন আমা’র কারখানায় ৮০০ শ্রমিক। আগে চীনের খেলনা দিয়ে বাজার ভরা থাকত। এখন বাজারের ৮০ শতাংশ খেলনাই আমাদের দেশের তৈরি।’
২০০৮ সালে আমান প্লাস্টিক যখন কার্যক্রম শুরু করে, তখন অন্যের কারখানা থেকে খেলনা তৈরি করে বাজারে দিত। আমান প্লাস্টিক ইস’লামপুর থেকে মোল্ড (হুবহু আদলে তৈরি একটি কাঠামো) তৈরি করে নিত। প্রথম দিকে শুধু বাচ্চাদের ঝুনঝুনানি তৈরি করে বাজারে দিত।
আর এখন আমান প্লাস্টিকে কাজ করেন ৮০০ কর্মী। ৪টি কারখানায় ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গায় তৈরি হচ্ছে ৬০ ধরনের খেলনা। নানান ধরনের গাড়ি, মোটরসাইকেল, উড়োজাহাজ, খেলনা পি’স্তল, ফিশিং গেম, গিটার—সবই তৈরি হচ্ছে আমানের কারখানায়। এখন বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার খেলনা বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু দেশে নয়, প্রতিবেশী ভা’রতেও যাচ্ছে এখন আমানের খেলনা। ১৭ বছর আগে খালি হাতে ঢাকায় আসা আমান উল্লাহ এখন নিজের গাড়িতে চড়েন।
আমান উল্লাহ বলেন, ‘২০১২ সালে খেলনা কারখানা দেখতে চীনে যাই। খেলনা তৈরির সব প্রযু’ক্তি দেখে আসি। তখনই পরিকল্পনা করি, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় খেলনা উৎপাদকে পরিণত হব। এরপর চীন থেকে মোল্ড এনে খেলনা তৈরি শুরু করি।’
ওই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ঋণ কর্মসূচি চলছিল। আমান উল্লাহ আইডিএলসি থেকে ২০১৩ সালে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। কারখানায় স্থাপন করেন আধুনিক যন্ত্র। এরপর তাঁর খেলনা আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায়।
সূত্রঃ প্রথম আলো