নতুন সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী, সিনেমা প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত জলিল। বরাবরের মতো জলিল সাহেবের সিনেমার ঘোষণাতেই চমক থাকে। তার সিনেমার বাজেট বেশি । তাই চমকের মাত্রাও একটু বেশি। তবে এবারের চমকটা একটু আলাদা। এবারের সিনেমায় মূখ্য চরিত্রে অনন্ত নিজে থাকছেন না। থাকছেন তার স্ত্রী বর্ষা। আর বাংলাদেশি অংশের নির্মাণের দায়িত্বে থাকছেন তিনি নিজেই। অনন্ত জলিলের ছবিতে মূখ্য চরিত্রে অনন্ত থাকবেন না এটা যেনো অসম্ভব চিন্তা। অথচ এটাই এবার হচ্ছে। অসম্ভবকে সম্ভব করাই যে অনন্তের কাজ!
রোববার রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে হয়ে গেলো নতুন এই ছবিটি নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’। এই এক মিট দ্য প্রেসে এক ঢিলে তিন পাখি শিকার করলেন অনন্ত জলিল! মানে ‘দিন দ্য ডে’ ও নতুন ছবি ’নেত্রী দ্য লিডার’ ও হোটেলটির সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠান একসাথেই করে নিলেন। এতে করে অনন্ত জলিলের ব্যবাসায়ীক প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া গেলো।
গত শুক্রবারে পাঠানো নিমন্ত্রণপত্রে অনুষ্ঠান শুরুর কথা জানানো হয় ৪টা। ঘন্টা খানেক দেরিতে গেলেও দেখা যায় সবে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা। মানে অনুষ্ঠানও নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৩০ মিনিট পরেই শুরু হয়!
দেরি করে যাওয়ায় ১৫ মিনিট আগে অনন্ত জলিল কি বলছিলেন তা শুনা হয়নি। যাওয়া মাত্রই দেখা গেলো মাইক্রোফোন নিয়ে কথা বলছেন অনন্ত জলিল। বলছিলেন, ‘আমরা দিন দ্য ডে’ নামের যে মুভিটি করেছি তা বাংলাদেশের এই প্রেক্ষাপটের নির্মিত একশ’টি সিনেমার বাজেটের সমান। যেহেতু আমি আর ইরান যৌথভাবে ছবিটি নির্মাণ করেছি। তাই আমি শুধু বাংলাদেশি অংশটুকু ইনভেস্ট করেছি। না হলে এতো টাকা আমি একা লগ্নী করলে মার্কেট থেকে টাকা তোলে না আনতে পারলে আমার কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যেতো।’
কথাগুলো বলার পর ছবিটিতে এতো টাকা ইরান সরকার লগ্নী করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ’খোঁজ দ্য সার্চ’ ছবির এ নায়ক। এ সময় অনন্ত জলিলের পাশে হাসি মুখে বসা ছিলেন তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা বর্ষাও। ‘দিন দ্য ডে’ বাংলাদেশ ইরান যৌথভাবে প্রযোজনা করলেও অনন্তর পরের ছবি ‘নেত্রী দ্য লিডার’ এ বাংলাদেশের সাথে যৌথ প্রযোজনা করবে তুর্কিস্তান। কথায় কথায় বিষয়টি জানিয়ে দিলেন অনন্ত। এও জানালেন দুটি ছবিই বিশ্বের ৮০টি দেশে মুক্তি পাবে।
বক্তব্যে অনন্ত জলিল আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের দেশের আর্টিস্টদের তো কলকাতার দর্শকরাই চিনেন না। কারণ ভারতীয় টিভি চ্যানেল আমাদের দেশে সচল কিন্তু আমাদের চ্যানেলগুলো সে দেশে দেখা যায়না। ফলে তারা আমাদের দেখতেও পায়না এবং চিনেও না। এই বাংলাদেশের ছবি বিশ্বের ৮০টি দেশে প্রদর্শিত হবে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল গর্বের।’
বিগ বাজেটের ‘দিন দ্য ডে’ ঈদুল ফিতরে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছে অনন্ত জলিলের। কিন্তু তিনি যেহেতু এটার একক প্রযোজক নন তাই তার একার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভবও নয়। কারণ ইরান ছবিটি তাদের দেশের সবচেয়ে বড় একটি উৎসবে প্রদর্শন করাতে চায়। তবে অনন্ত বাংলাদেশে ঈদুল ফিতরে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ইরানের কাছেও। উভয় পক্ষ একমতে এলেই ঈদুল ফিতরে মুক্তি সম্ভব বলে জানালেন অনন্ত।
আর ‘নেত্রী দ্য লিডার’ ছবি বাংলাদেশ ভারত ও তুর্কিস্তানে শুটিং করা হবে। ছবিটিতে তুর্কিস্তানের এক সুপারস্টারেরও অভিনয়ের কথা রয়েছে।
অনন্ত জলিল যখন এসব নিয়ে কথা বলছিলেন। বিদেশে যৌথ প্রযোজনায় বড় বড় বাজেটের ছবিতে লগ্নী করছেন তিনি। ঠিক এই ধরনের ছবিতে শাকিব খানকে নিয়ে কাজ করার কোনে পরিকল্পনা আছে কিনা তার? রাখা হয় এমন প্রশ্ন। এ প্রশ্নে ভড়কে যাননা অনন্ত। সহজ ভাষায় বলেন, এমন প্রজেক্টের জন্য অনেক প্রফেশনাল হতে হয়, গুড হিউমন হতে হয়। মোট কথা ব্যাক্তিগত প্রোফাইল থাকতে হয় সচ্ছ। কারণ আমি যখন ইরানের সঙ্গে কাজ করতে যাই তখন ইরানের মেয়র, সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিং করতে হয়েছে। তারা আমার উপর তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। আমি ব্যক্তিটা আসলে কেমন সেটা যাচাইয়ের জন্য। তারা তদন্তের পর আমাকে নিয়ে ১৪ পৃষ্টার একটা রিপোর্ট দেন। যেখানে আমার সব কর্মকাণ্ডের কথা বলা ছিলো। বিদেশে কাজ করতে হলে ভালো প্রোফাইলের প্রয়োজন আছে। শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। আপনি কলকাতায় ছবি করতে গেলে হয়তো এসব প্রোফাইলের দরকার হবে না। কিন্তু বলিউড, ইরান, তুর্কি এদের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা ছবি করতে হলে আপনার প্রোফাইল দরকার আছে ।’
তবে অন্যদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে শাকিব খানকে নিয়ে কাজ করতে না চাইলেও দেশের বড় বাজেটের ছবিতে শাকিব খানকে নিয়ে কাজের ইচ্ছে প্রকাশ করেন অনন্ত জলিল। তিনি বলেন, ’আমি আর শাকিব খান একসঙ্গে ছবি করলে বাংলদেশের ৯০ ভাগ দর্শক খুশি হবে। তারা চান অনন্ত জলিল ও শাকিব খান একটা ছবি করুক। তাই যৌথ প্রযোজনার না হোক দেশের বড় কোন বাজেটের ছবি শাকিব খানের সঙ্গে কিভাবে করা যায় সেটা দেখবো। সবার আশাটা কিভাবে পূরণ করা যায় সে চেষ্টাটা করে দেখবো।’
Copyfrom: samakal