এ কেমন হিরো? অনেক হিরো ফুটবলে রয়েছেন যাদের বিভিন্ন উপাধিতে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু ভিন্ন এক উপাধি অাছে পর্তুগাল ফুটবলের অন্যতম মহান লিজেন্ড রিকার্ডো এর। বলা হয় 'দ্যা নো গ্লাভস হিরো'। কিন্তু এর কারন কী? অবশ্যই অাছে। কেননা প্রত্যেক উপাধির পেছনে সংগত কারন থাকে।
সময়টা ২০০৪ ইউরো কোয়ার্টার ফাইনাল এর। বেকহ্যাম, ওয়েন, ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড, রুনিদের ইংল্যান্ডের মুখোমুখি রুই কস্তা, ডেকো, ফিগো, পিচ্ছি ক্রিস্টিয়ানোদের পর্তুগাল। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটির মাত্র ৩ মিনিটেই মাইকেল ওয়েন এর গোলে লিড নেয় ইংল্যান্ড। এরপর থেকে ম্যাচে দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকে।
ম্যাচের বৃদ্ধকাল চলতেছে! মানে ৮৩ মিনিট। সেই সময়ে পস্তিজার গোলে গোল শোধ করে নেয় পর্তুগীজরা। নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ সমতায় থাকলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এবার ১১০ মিনিটে পর্তুগীজ মায়েস্ত্রো রুই কস্তার গোলে ২-১ এ লিডে দেয় পর্তুগীজরা। কিন্তু তার মাত্র ৫ মিনিট পরেই ল্যাম্পার্ড এর গোলে আবার সমতায় ফিরে ইংলিশরা।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষেও খেলা রইল অমীমাংসিত! এবার হবে ভাগ্য পরীক্ষা। পেনাল্টি শ্যুট-আউটে জয়-পরাজয় নিশ্চিত হবে। শুরুতেই ইংলিশদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় রিকার্ডো। ডেভিড ব্যাকহ্যামের পেনাল্টি রুখে দেন পর্তুগীজ কিপার। এদিকে ডেকো এসে গোল করতে ভুল করেনি। এরপর টানা ৫ পেনাল্টি সফল ভাবে পর্তুগালের জালে প্রবেশ করায় ইংলিশরা।
বিপরীতে পর্তুগালের ৫টিতে রুই কস্তা এক টা মিস করে। টানা ৫ পেনাল্টির একটাও রুখতে না পেরে মনে মনে চটে যায় পর্তুগীজ গোলরক্ষক। রাগে ক্ষোভে নিজের উপর জ্বাল মেঠালেন। ছুঁড়ে ফেললেন নিজের হাত থেকে গ্লাভসজোড়া। ইংলিশ খেলোয়াড় ভাসেল যখন পেনাল্টি নিতে আসে তখন গ্লাভস খুলেই গোল পোস্টে দাড়িয়ে যান নিজের উপর অভিমান করা পর্তুগীজ সেই গোল রক্ষক।
বাম পাশে ইগলের মত ঝাপিয়ে পড়েই শিকার ধরে ফেলেন। আটকে ই দেন ভাসেলের স্পট কিক টি। ফলাফল ৫-৫। স্টেডিয়ামে স্তব্ধতা বিরাজমান। হার্ট-বিট বেড়ে হৃদয় ফেটে যাবার অবস্থা! কারণ পর্তুগালের হাতে ১টি সুযোগ ছিল যা ম্যাচ উইনিং পেনাল্টি। পেনাল্টি নিতে অাসেন রিকার্ডো নিজেই। গোল পোস্টের বীরত্ব দেখিয়ে এবং স্পট কিকে দেখানোর পণ করলেন।
স্নায়ুচাপকে বললেন দূর হও! এবার পর্তুগালকে সেমি-ফাইনাল উপহার দিতে চাই। কিক নিলেন এবং গোল করেই ফেললেন। স্টেডিয়ামের একাংশ চিৎকারে উল্লাসে স্টেডিয়াম অাকাশে তোলা হয়ে উড়ে যাবার অবস্থা! অন্য অংশে বেদনার নির্মম ক্ষতের অাঘাতে মাটি ফেটে নিচে যাওয়ার মত অবস্থা!
ইউরো ২০০৪ আসরেকে রিকার্ডো রাঙিয়ে দেন নতুন রঙে। জায়গা দখল করেন পুরো দুনিয়ার পত্রিকার প্রথম পাতায়। মুখে মুখে,অালোচনায়, শিরোনামে একটাই নাই রিকার্ডো। গ্লাভস খুলে পেনাল্টি সেভ করে অাবার নিজেই পেনাল্টিতে গোল করে পর্তুগাল ইউরো '০৪ এর সেমিতে নেন। সেই কারনেই তাঁকে 'নো গ্লাভস হিরো' বলে সম্মান করা হয়।
পর্তুগীজ এই মহান গোলকিপার ও লিজেন্ডের জন্মদিন ছিল গতকাল। অনেক গর্বিত লাগে যখন পর্তুগীজ লিজেন্ডদের এমন বীরত্বের গল্প জানলে। শুভ জন্মদিন লিজেন্ড রিকার্ডো। তুমি রবে প্রতিটি পর্তুগীজ ফুটবল ফ্যানদের হৃদয়ে