from : internet |
মিথ্যে ভালোবাসার কাছে হেরে গেলো আরো একটি প্রাণ
ধারণা করা হচ্ছে লাইজুর আত্মহত্যার পেছনে তানভীরের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। তানভীরের উস্কানিতেই লাইজু তার স্বামীর সঙ্গে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু তাদের (তানভীর-লাইজু) সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে তানভীরের মা ও স্ত্রী লতা লাইজুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে পুলিশ ও লাইজুর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লাইজু ও সুজনের বিয়ে হয় পাঁচ বছর আগে। লাইজুর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার সিঙেরবাড়ি। তাদের দুই বছরের একটি ছেলে আছে। সুজন একজন ব্যবসায়ী, তিনি মিরপুরে থাকেন। আর লাইজুর কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের শিশু সার্জারির ৫ নম্বর ওয়ার্ড। সেই সুবাদে লাইজু হাসপাতালের হোস্টেলে থাকতেন।
ডিএমপির রমনা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে এ মৃত্যুর পেছনে পরকীয়া প্রেমঘটিত বিষয় রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। খুব দ্রুত আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে আত্মহত্যার আগে একটি আবেগঘন সুইসাইড নোট লিখে রেখে যান লাইজু। তিনি লেখেন, আমি কোনো অপরাধ করিনি, লতা আর সুজন মিলে আমার জীবনটাকে শেষ করে ফেলেছে। যেখানে মান সম্মান নেই, সেখানে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া সমান কথা। মানুষ যে নিজের স্বার্থের জন্য এতটা নিচে নামতে পারে তা আগে বুঝতে পারিনি তানভীর। যে আমার সম্মান মাটির সাথে মিশে দিল আর তুমি তাকে এভাবে কাছে টেনে নেবে বুঝতে পারিনি। আমার কোনো দোষ ছিল না। হাজার কষ্টের মাঝেও আজ সত্যি আর পারলাম না। হেরে গেলাম তোমার ভালোবাসার কাছে। ভালো থেকো সবাই। আমার কোনো প্রকার এক্সিডেন্টের জন্য কেউ দায়ী নয়। ভালো থাকো সাথী। সত্যি তোমার তুলনা হয় না।
শাহবাগ থানার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে শাহবাগ থানায় তানভীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করতে এসেছিলেন লাইজু। এ সময় তার স্বামীকে থানার বাইরে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি পুলিশকে এসে জানান তিনি। ওই সময় লাইজু জানান, করোনা ইউনিটে নাইট ডিউটি করার সময় তানভীর তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আবার বাইরে গিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে জানান মামলা করবেন না। পারিবারিকভাবে তা মীমাংসা করবেন।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তানভীরের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। কয়েক বছর আগে তানভীরকে বিএসএমএমইউতে লিফটম্যানের চাকরি দেন লাইজু। এরপর থেকেই লাইজুকে উত্ত্যক্ত করত তানভীর। এ বিষয়ে লাইজু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগও করেন। এর তিন মাস আগে লাইজুকে ধর্ষণও করে তানভীর। বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করা হয়।
এক পর্যায়ে তানভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন লাইজু। তানভীর প্রতিনিয়ত লাইজুর সঙ্গে মেলামেশা করলেও স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে চাইত না। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের বিষয়টি জানজানি হলে তানভীরের স্ত্রী লতা ও লাইজুর স্বামী সুজন এক হয়ে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। বিয়ের জন্য চাপ দিলে একপর্যায়ে তানভীর লাইজুর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লাইজু। এ কারণে এক মাস স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বন্ধ রাখেন।
এদিকে আত্মহত্যার আগে স্বামী সুজন, প্রেমিক তানভীর ও মাকে বেশ কিছু এসএমএস করেন লাইজু। সেখানে স্বামী সুজনের ফোনে করা এসএমএসে লেখেন, সুজন আমাকে মাফ করে দিও, ছেলেকে দেখে রেখ, কাছে রেখ।
প্রেমিক তানভীরকে লেখেন, তুমি আমাকে যে কষ্ট দিছো তারপর আর বেঁচে থাকার সাধ থাকে না। হেরে গেছি আমি, তোমার মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কাছে। তোমার মিথ্যা ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি। সব শেষ করে দিলাম, ভালো থাকো। ভালো থাকো তুমি, তোমার ফ্যামিলি। আমাকে আর কারো কাছে খারাপ করো না।
লাইজু তার মাকে এসএমএস করেন, মা, আমার কপাল খুব খারাপ। আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমার বাবা নেই বলে আজ এ করুণ পরিণতি। এত যুদ্ধ করে চলা যায় না।
লাইজুর স্বামী সুজন পারভেজ বলেন, তানভীর লাইজুকে সব সময় উত্ত্যক্ত করত। লাইজু আমাকে বলত তানভীর তাকে ব্ল্যাকমেল করছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারি একপর্যায়ে লাইজু তানভীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আমি অনেক অনুরোধ করলেও সে তানভীরের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে গেছে। একপর্যায়ে তানভীরের স্ত্রী লতা আমাকে ফোন করে বিষয়টি বলে। আমরা চেষ্টা করেছি লাইজুকে ফিরিয়ে আনতে।
তিন মাস আগে থানায় অভিযোগ করতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলেন, লাইজু আমাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিল। অমাকে বাইরে রেখে ও থানার স্যারদের সঙ্গে কথা বলে। পরে বাইরে এসে বলে মামলা করব না। পারিবারিকভাবে সমাধান করব।