ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণে আদালতের আদেশে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ দেয়া জমিতে নতুন মসজিদের নির্মাণ কাজ ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে।
রোববার মসজিদটি নির্মাণের জন্য দায়িত্ব পাওয়া ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবসে তারা এই মসজিদের নির্মাণ কাজের সূচনা করতে যাচ্ছে।
১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় উন্মত্ত হিন্দু জনতা অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ওই সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো দাবি করছে, মুঘল সম্রাট বাবর ১৬ শতকে অযোধ্যায় হিন্দু দেবতা রামের স্মরণে নির্মিত একটি মন্দির ধ্বংস করে ওই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের ওই স্থানেই দেবতা রাম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
স্থানটি নিয়ে ভারতীয় আদালতে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ওই স্থানে রাম মন্দির তৈরির আদেশ দেন। অপরদিকে মুসলমানদের ক্ষতিপূরণের জন্য ভারতের সরকারি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে আদালত অযোধ্যায় ধ্বংস হওয়া মসজিদের ২৫ কিলোমিটার দূরে বিকল্প পাঁচ একর জমি দেয়ার আদেশ দেয়।
মসজিদটি তৈরির জন্য ওই সময় আইআইসিএফ ট্রাস্ট গঠন করা হয়।
রোববারের বিবৃতিতে আইআইসিএফ ট্রাস্ট জানায়, ‘ধন্যিপুর মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প’ নামে ওই মসজিদের নির্মাণ কাজ ২৬ জানুয়ারি নির্ধারিত পাঁচ একর জমিতে শুরু হবে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে নির্মাণ কাজের সূচনা হবে।
বিবৃতিতে আইআইসিএফ সেক্রেটারি আতহার হোসাইন বলেন, ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ধন্যিপুর মসজিদের নির্মাণের সূচনার মাধ্যমে উদযাপন করবে।’
বিবৃতিতে জানানো হয়, মসজিদের এই নির্মাণ প্রকল্পে জাদুঘর, লাইব্রেরি, লঙ্গরখানাসহ একটি হাসপাতাল, ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল রিসার্চ সেন্টার ও একটি প্রকাশনা সংস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, পাঁচ একরের ওই জমিতে বনায়নের একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পে অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৃথিবীর সকল অঞ্চলের গাছ রোপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ দিকে, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, মন্দির নির্মাণের জন্য ভারতীয় প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ পাঁচ লাখ এক রুপি অনুদান দিয়েছেন। মুসলিম সংগঠন ও অধিকারকর্মীরা ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আরো জানানো হয়, মন্দির তৈরির জন্য ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় এক শ’ নয় কোটি টাকা) অনুদান সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আগেই এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা