সিনেমায় যদি পরীক্ষিত অভিনেতা মোহনলাল থাকেন, তবে সে সিনেমা যে সুপারহিট হবে তা এক কথায় বলে দিতে পারে যে কেউই। মোহনলালের অতীতের সাফল্য এমন সাক্ষ্যই দেয়। জর্জকুট্টিরূপে আট বছর পর দৃশ্যম-২ এ ফিরে আবারো দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছেন মালায়লাম সিনেমার কিংবদন্তী এই অভিনেতা। এই মুহূর্তে নেটিজেন দুনিয়ায় প্রশংসার সাগরে ভাসছেন তিনি।
মালায়লাম চলচ্চিত্রের সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে মোহনলালকে বিবেচনা করা হয় নানা দিক দিয়ে। তার ভক্তরা অবশ্য তাকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের অভিনেতা হিসেবে মানেন না। বরং তারা মনে করেন মোহনলাল একজন বৈশ্বিক তারকা।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। মালায়লাম ফিল্ম ইন্ড্রাস্টির সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া তারকা মোহনলাল। একজন পরিপূর্ণ অভিনেতা বলা হয় তাকে। ভক্তরা যাকে ভালোবেসে ডাকেন লালেত্তান নামে।
জেনে নেওয়া যাক কিংবদন্তী অভিনেতার আরো কিছু অজানা দিক
প্রথম সিনেমার মুক্তি ২৫ বছর পর
থিরানত্তম হলো লালেত্তান অভিনীত প্রথম ছবি। ১৯৭৮ সালে তার বয়স যখন ১৮ তখন এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেন্সরশিপ জটিলতায় তা আটতে যায়। যখন ছবিটি মুক্তি পেল ততোদিনে পেরিয়ে গেছে ২৫ বছর। ২০১৩ সালে থিরানত্তম দর্শকের সামনে হাজির হয়। অবশ্য লালেত্তানের প্রথম সিনেমা যেটি মুক্তি পায় সেটি মনজিল ভিরিঞ্জা পুক্কাল। ১৯৮০ সালে এটি দর্শক দেখতে পায়।
পেশাদার কুস্তিগির
সিনেমায় নাম লেখানোর আগে মোহনলাল ছিলেন একজন পেশাদার কুস্তিগির। ১৯৭৭-৭৮ সালে কেরালায় কুস্তিতে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। জাতীয় পর্যায়ে কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কথাও ছিল। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় তার আর যাওয়া হয়নি। কারণ, প্রথম সিনেমার অডিশন দেওয়ার জন্য ডাক আসে তার।
ঐশ্বরিয়া রাইয়ের প্রথম নায়ক
১৯৯৪ সালে ঐশ্বরিয়া রাই মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় করেন। মনি রতমের সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রভূবনে পা রাখেন তিনি। ইরুবার নামে এই সিনেমায় ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই মোহনলাল।
তায়েকান্ডো ব্ল্যাক বেল্ট
মোহনলাল হলেন প্রথম কোনো দক্ষিণ ভারতীয় তারকা যিনি সম্মানসূচক তায়েকান্ডো বø্যাক বেল্ট লাভ করেন। ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ব তায়েকান্ডো সদর দপ্তর তাকে এ সম্মান জানায়। তার আগে জনপ্রিয় অভিনেতা শাহারুখ খানকেও সম্মানসূচক বø্যাক বেল্ট দেয় সংস্থাটি।
মোহনলাল একজন ব্যান্ড তারকাও
শুধু কী তিনি অভিনয় দিয়ে রুপালি পর্দা কাঁপান ? আগেই বলেছি তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নানা দিকে পদচারণা তার। এ তারকার একটি ব্যান্ড দলও আছে। নাম ল্যালিসন- দ্য লাল ইফেক্ট।
এক বছরে ৩৪ সিনেমা
চোখ কপালে উঠবে যদি শোনেন, ১৯৮৬ সালে এই তারকা ৩৪ টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এই ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ২৫টি আবার বক্স অফিস হিট।
প্রতি ১৫ দিনে একটি করে সিনেমা
আসুন আরেকবার চমকে দেই, ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে প্রতি ১৫ দিনে তার একটি করে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
অস্কারে তার গুরু
১৯৯৭ সালে মালায়লাম একটি চলচ্চিত্র অস্কারে পাঠানো হয়েছিল। গুরু নামে সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
পুুরস্কারের ভারী ঝুলি
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য ২০০১ সালে তিনি পদ্মশী পদক জেতেন। ২০১৯ সালে তিনি পদ্ম ভূষণ পদক পান। আইফা অ্যাওয়ার্ড জেতা তিনিই একমাত্র মালায়লাম তারকা। এছাড়াও চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন চারটি জাতীয় পুরস্কার।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহনলাল
ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম অভিনেতা যাকে ভারতীয় টেরিটোরিয়াল সেনাবাহিনী সম্মান সূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মর্যাদা প্রদান করেছে। ২০০৯ সালে তাকে এ সম্মান দেওয়া হয়।
বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট আছে তার
সারা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচ ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খুলিফা। সেই বুর্জ খলিফার ২৯ তলায় রয়েছে তার একটি সুবিশাল অভিজাত ফ্ল্যাট।
ব্লগার তিনি
তিনি একজন ব্লগারও। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে তিনি লেখালেখি করেন ব্লগে।
লেখক : পলাশ সরকার