ক্ষুধার্ত বাছুরটি বারবার ছুটে যাচ্ছে মৃত মায়ের কাছে দুধ পান করতে। খামার মালিক বাবুল মিয়া বাছুরটিকে বারবার সরিয়ে দিচ্ছেন মৃত মায়ের কাছ থেকে। কিন্তু কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না তাকে। ক্ষুধার্ত বাছুরকে এমন ছটফট করতে দেখে উপস্থিত সকলের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

তবে শুধু এই বাছুরটির মা-ই নয়, দুর্বৃত্তদের দেওয়া বিষে খামারের ২৬টি গরুর মধ্যে ১৩টি মারা গেছে। অচেতন আরও ১৩টিঁ গরু। মারা যাওয়া ১৩টি গরুর ১১টি গর্ভবতী ছিল।

শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শেখেরকান্দি গ্রামে হযরত শাহ নবাব ডেইরি ফার্ম লিমিটেডে। আর রোববার সকাল থেকে খামারি বাবুল মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের আর্তনাতে এলাকার পরিবেশ ভাড়ি হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের শেকেরকান্দি গ্রামের মো. বাবুল মিয়া ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ ইউনিট এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের অর্থায়ন ও তত্তাবধানে হযরত শাহ নবাব ডেইরি ফার্ম লিমিটেড নামের গরুর ফার্মটি নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন। নিজের তিন একর জমি বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এছাড়াও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকেও টাকা ধার নিয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এই খামার শুরু করেন ৭৫টি গরু দিয়ে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় রোগাক্রান্ত হয়ে ৩৬টি গরু মারা যায় এবং বিক্রি করেন ১৩টি গরু। আর এবার দুর্বৃত্তদের বিষে সব হারিয়ে নিঃস্ব খামারি বাবুল মিয়া ঋণ শোধ নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা।


বাবুল মিয়া বলেন, ৫ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে এমনিতেই টানাটানির মধ্যে সংসার চলে আমার। এখন আবার নতুন করে ১৩টি গরু মারা গেছে। আরো ১৩টি মারা যাওয়ার মতো। গরুগুলোকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। কে করেছে জানলেও ক্ষতির শঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে পারব না। ব্যাংকঋণ কীভাবে শোধ করব সেই চিন্তায় আছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়ায় গাভিগুলো মারা যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারব।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী জাতির রহমান বলেন, এই ধরণের কাজ খুবই নিন্দনীয় এবং কষ্টের। যে এই কাজ করেছে, অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি রাজু আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরোয়ার বলেন, এটা খুবই কষ্টের বিষয়। প্রানিসম্পদ কর্মকর্তাকে বলেছি মারা যাওয়া গরুগুলোর ময়নাতদন্ত করতে।