বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যু: নিখোঁজ বান্ধবীকে পেলেই খুলতে পারে জট |University student dies

রাজধানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট খুলছে না। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।  এ ঘটনায় মৃত ছাত্রীর বাবা মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করলে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

রাজধানীতে মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

এ ঘটনায় উত্তরার বিভিন্ন বার, ক্লাব, রেস্টুরেন্ট, হোটেলে পুলিশের অভিযানে বিপুল অবৈধ মাদকদ্রব্য জব্দের পাশাপাশি আটক করা হয়েছে ২২ জনকে। মামলা হয়েছে তিনটি।

এদিকে মদের পার্টিতে থাকা মৃত তরুণীর বান্ধবী নেহা ও তার বন্ধু অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের এখনো কোনো হদিস মেলেনি।  নেহার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, ওই তরুণী ও তার বন্ধু রায়হানসহ চারজন শুক্রবার উত্তরার ব্যাম্বু রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে তারা মদ পান করে। এর মধ্যে একটা মেয়ে অসুস্থ হয়ে চলে যায়। আর বাকিদের মধ্যে আরাফাত, মর্তুজা রায়হান চৌধুরী এবং ভিকটিম উবারে করে মোহাম্মদপুরে নবোদয় হাউজিং এলাকায় নুহাদ আলম তাফসীরের বাসায় যায়। সেখানে তারা রাতযাপন করে। রাতে আরাফাত ও ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিটি হাসপাতালে শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরাফাত। আর রোববার দুপুরে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মারা যায় ওই ছাত্রী। এ ব্যাপারে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এতে রায়হান, আরাফাত, তাফসীরসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ রায়হান ও তাফসীরকে গ্রেফতার করে রোববার পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, রিমান্ডে রায়হান পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সূত্র ধরে তাদের মাঝে প্রায়ই শারীরিক সম্পর্ক হতো। শুক্রবার তারা ব্যাম্বু রেস্টুরেন্টে মদ্যপানের পর সেখানকার বাথরুমে ঢুকে শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করছিল। পরে তাফসীরের বাসায় গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক হয়। ওই রাতে তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উত্তরা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সোমবার ব্যাম্বু রেস্টুরেন্টের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে সেখানে তাদের অবস্থানের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই রেস্টুরেন্টে বসে মদ পান করলেও তারা মদ বাইরে থেকে নিয়ে গিয়েছিল। 

এর আগে সোমবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, ওই শিক্ষার্থীর শরীরে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। খাবারে বিষক্রিয়ার ফলে তার মৃত্যু হতে পারে। আমরা আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। রিপোর্ট এলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। তিনি বলেন, নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অচেতনের পর তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ধানমন্ডির সিটি জেনারেল হাসপাতালের আরাফাতের মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক রিপোর্টে মদপানে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। 

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। রেস্টুরেন্ট ও মোহাম্মদপুরের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও বিভিন্ন তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি।

ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, নেহা অসুস্থ হওয়ার পর তার অবস্থা কী? সে কী অবস্থায় রয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে সে বিষয়টি খোলাসা হয়ে যাবে।

তদন্তের স্বার্থে আরাফাতের লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। যদি মামলার তদন্তের স্বার্থে লাশ তোলা প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে তোলা হবে।

এদিকে এ ঘটনার পর রাজধানীর উত্তরার ব্যাম্বু শটসহ বেশ কয়েকটি বার, ক্লাব ও হোটেলে পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছে ২২ জন।

ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, অভিযানে বেশকিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তিনটি মামলা করা হয়েছে। বেশকিছু সিসা বার ও ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Author

ask

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post