একজন ফুটবলার ফুটবল খেলে সর্বোচ্চ কত উপার্জন করতে পারেন? ইউরোপিয়ান ফুটবল, চীনের ‘চাইনিজ ফুটবল লিগ’ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস লিগে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উড়ছে ফুটবলারদের জন্য। কিন্তু তাই বলে সেটার ও তো একটা সীমা থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা তাদের বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির পেছনে গত চার মৌসুমে যে টাকা ব্যয় করেছে, তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। স্প্যানিশ পত্রিকা এল মুন্ডো এই বিশাল তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। তাদের হাতে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
সে আলোকেই এল মুন্ডো রিপোর্ট করেছে, গত চার বছরে মেসির পেছনে বার্সা ব্যয় করেছে ৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৯ ইউরো (৫ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা)। বাৎসরিক পারিশ্রমিক, বোনাস এবং সাইনিং মানি- সব মিলিয়ে এত বিশাল পরিমাণে অর্থ মেসির পেছনে ব্যয় করেছে বার্সেলোনা।
এলমুন্ডো রিপোর্ট করেছে, এত বিশাল পরিমাণে ব্যয় করার কারণেই সম্প্রতি অনেক বড় আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে স্প্যানশি লা লিগার এই জায়ান্ট ক্লাবটি। ইউরোপিয়ান মিডিয়াগুলোও বলছে, বার্সার এতবড় আর্থিক সমস্যায় পড়ার পেছনে মেসির সঙ্গে এতবড় চুক্তিই সবচেয়ে বড় দায়ী।
২০১৭ সালের পর থেকে চার মৌসুমের জন্য মেসির সঙ্গে এই আর্থিক লেনদেনের চুক্তি করা হয়েছে। যার এখনও পাঁচ মাস বাকি। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর জুনের ৩০ তারিখ মেসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হবে।
শুধু ফুটবলই নয়, ক্রীড়া দুনিয়ার ইতিহাসে নির্দিষ্ট একজন ফুটবলারের পেছনে এত বড় আর্থিক লেনদেনের এটা বিশাল এক রেকর্ড। চোখ কপালে তুলে দেয়ার মত। এল মুন্ডোর এই রিপোর্ট দেখে চোখ কপালে উঠে গেছে সারা দুনিয়ার মানুষের।
২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যুর সঙ্গে এত বড় আর্থিক বিনিময়ে বার্সার সঙ্গে চুক্তি করেন মেসি। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, এরপর মেসির সঙ্গে বার্সার আর কোনো লেনদেনের সম্পর্ক থাকবে না। দেনা-পাওনা থাকবে না।
গত মৌসুমের শেষেই বার্সা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু সেবার নানা শর্তের বেড়াজালে আটকে গিয়ে আর পারেননি ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে। যদিও এবার চুক্তি শেষ হওয়ার পর আর মেসির পক্ষে বার্সা ছাড়ার পেছনে কোনো শর্ত থাকবে না। তাকে আটকাতেও পারবে না বার্সা কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি বার্সার অ্যাকাউন্টের হিসাব বাইরে ফাঁস হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটির ঋণ প্রায় এক বিলিয়ম ডলারের ওপর। ক্লাবের বাজেটের চার ভাগের তিনভাগই ব্যয় হয় খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাবদ।
শনিবার শেষ রাতের দিকেই এল মুন্ডো এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারা লিখেছে, ৩০ পৃষ্ঠার চুক্তিপত্রে লেখা আছে প্রতি মৌসুমে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ইউরো পারিশ্রমিক দেয়া হবে মেসিকে। এর মধ্যে অবশ্য সব শর্ত জুড়ে দেয়া আছে (বোনাস, সাইনিং মানি- সব)।
চার বছরের এই চুক্তিতে যোগ করা হয়েছে ১১ কোটি ৫২ লাখ ২৫ হাজার ইউরো রাখা হয়েছে চুক্তি নবায়নের বোনাস এবং লয়ালটি বোনাস রাখা হয়েছে, ৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৫ ইউরো। সব মিলিয়ে চার মৌসুমে ৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৯ ইউরো (৫ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা)।
চুক্তির এখনও ৫ বছর বাকি। এই ৫ মাস বাদে এরই মধ্যে মেসিকে বার্সার পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া হয়েছে ৫১ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৫ ইউরো। যদিও এত বড় চুক্তির বিষয়টি নিয়ে বার্সেলোনা এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি; কিন্তু তারা পুরোপুরি স্বীকারও করছে না।
এত বিশাল পরিমাণে চুক্তির পর বার্সেলোনাকে ২০১৮ এবং ২০১৯ স্প্যানিশ লা লিগা শিরোপা উপহার দিয়েছেন মেসি। যদিও এখনও পর্যন্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারেনি। গত তিন মৌসুমে এএস রোমা, লিভারপুল এবং বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা।