টিকা নেওয়ার পর ভারতে ৫৮০ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভারতে তিন দিনে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮০ জনের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

টিকা নেওয়ার পর ভারতে ৫৮০ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া



এ ছাড়া টিকা নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির সরকার বলেছে, ওই দুজনের মৃত্যুর সঙ্গে করোনার টিকার কোনো যোগসূত্র নেই। এদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ভিত্তিক একটি গবেষণা দল জানিয়েছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার এখন ব্রিটেনে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকার অসম নীতির কারণে বিশ্ব একটি ‘বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে’। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এনডিটিভি।

ভারতে ২ জনের মৃত্যু : দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার পর দুজন মারা গেলেও তার সঙ্গে টিকার কোনো যোগসূত্র নেই। এই দুজনের একজন উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদের মহিপাল সিং (৪৬)। অপরজন কর্নাটকের বেলারি এলাকার ৪৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। মহিপাল সরকারি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ছিলেন। মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা আগে তিনি করোনার টিকা নিয়েছিলেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া ৫৮০ জনের বেশিরভাগেরই উপসর্গ মৃদু। তবে সাতজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন দিল্লির। কর্নাটকে দুজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাখন্ডে একজন ও ছত্তিশগড়ে একজনকে টিকা নেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ভারতে করোনার দুটি টিকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে একটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এটি ভারতে উৎপাদন করছে দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট। অনুমোদনপ্রাপ্ত অপর টিকাটি হলো ভারত বায়োটেকের উদ্ভাবিত। এই টিকা ‘পরীক্ষা কর্মসূচির’ আওতায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ কারণে এই টিকা নিতে গ্রহীতাকে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। এর আগে ইসরাইলে ফাইজারের টিকা গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ১৩ জনের মুখ বেঁকে (প্যারালাইসিস) গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারও আগে নরওয়েতেও ফাইরাজের টিকা নেওয়ার পর ২৩ জন মারা যান।

সর্বোচ্চ মৃত্যুহার ব্রিটেনে : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গবেষণা টিম ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’য় সংকলিত তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার এখন ব্রিটেনে। গত সপ্তাহে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯৩৫ জন মানুষ মারা গেছেন। এই সংখ্যা প্রতি ১০ লাখে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যদিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রকে অতিক্রম করেছে ব্রিটেন। চেক প্রজাতন্ত্রে প্রতি ১০ লাখ মানুষে মৃত্যুহার ১৬ দশমিক ৩। আর পর্তুগালে এই হার ১৪ দশমিক ৮২।

বিশ্ব বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে : ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, বিশ্ব এক বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর এই ব্যর্থতার মূল্য বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোয় জীবন ও জীবিকা দিয়ে দিতে হবে। তিনি জেনেভায় সোমবার সংস্থটির নির্বাহী বোর্ডের একটি বৈঠকের উদ্বোধনীতে এ কথা বলেন।

ডব্লিউএইচওর মহাসচিব বলেন, গরিব দেশগুলোয় করোনার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আগে ধনী দেশগুলোর কম বয়সি ও স্বাস্থ্যবান লোকজনের টিকা পাওয়াটা মোটেই ঠিক নয়। বিশ্বের ৪৯টি ধনী দেশে ইতোমধ্যে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডোজের বেশি করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে একটি গরিব দেশে মাত্র ২৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ধনী দেশগুলোর ‘আমিই প্রথম’ দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই নীতি আত্মঘাতী হবে। কারণ, এটি টিকার দাম বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ২০ লাখ ৫২ হাজার ছাড়াল : বিশ্বব্যাপী করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ৬১ লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ২০ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষ।

আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নয় কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ২২৫ জন। একইসময় বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন ২০ লাখ ৫২ হাজার ৮০ জন। আর এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৬৬ জন।

Author

ask

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post